ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক অধিকার সমূহ
ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক অধিকার সমূহের ধারণা নিচে দেওয়া রইলো । আজকে এই পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে – মৌলিক অধিকারের সংজ্ঞা, মৌলিক অধিকার কয়টি ও কি কি । মৌলিক অধিকার সম্পর্কিত ধারাগুলি নিয়ে।
মৌলিক অধিকারের সংজ্ঞা
ভারত ১৯৪৭ সালের আগে পর্যন্ত পরাধীন ছিল। আর পরাধীন ভারতে নাগরিকদের অধিকারের চিন্তা ছিল কষ্টকল্পিত। তবে ১৮৯৫ সলের ভারতীয় সংবিধান বিল (The Constitution of India Bill, 1895) পাশের মাধ্যমে ভারতীয় জনগণের বাক্স্বাধীনতা, স্বাধীন শিক্ষা ও ব্যাক্তি স্বাধীনতার মত কিছু অধিকার সীমাবদ্ধ ভাবে ভােগের অধিকার সংক্রান্ত দাবি গুরুত্ব পেতে থাকে। স্বাধীনতার পর ১৯৫০ সালের নতুন সংবিধানে স্বাভাবিক ভাবেইবেশ কিছু অধিকার লিপিবদ্ধ হয়। ভারতের সংবিধানে প্রধানত তিন ধরনের অধিকার দেখা যায় – মৌলিক অধিকার (১২ – ৩৫ নম্বর ধারা), নির্দেশমূলক বা নীতি সমূহ (৩৬-৫১নম্বর ধারা) এবং বিধিবদ্ধ অধিকার (৩০০ কনম্বর ধারা)।
তবে সাধারণভাবে যে সকল অধিকার মানুষের ব্যাক্তিত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে একান্ত অপরিহার্য তাকেই মৌলিক অধিকার বলা হয়।
অধ্যাপক দূর্গাদাস বসুর ভাষায় “A fundamental right is one which is protected and granted by the written constitution of the state.” অর্থাৎ মৌলিক অধিকার হল সেই সমস্ত অধিকার যা দেশের লিখিত সংবিধান দ্বারা রক্ষিত ও সুনিশ্চিত।
ভারতে অবশ্য মৌলিক অধিকার ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত। কারণ ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য যে সমস্ত সুযােগ সুবিধা একান্ত প্রয়ােজনীয়, তার সবগুলি স্বীকার করা হয় নি। যেমন – কর্মের অধিকার ভারতে মৌলিক অধিকার নয়। একই রকমভাবে সম্পত্তির অধিকার ও বিধিবদ্ধ অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। এক কথায় বলা যায় মৌলিক অধিকারগুলি দেশের সর্বোচ্চ আইন, শাসন আইন ও বিচার বিভাগ কর্তৃক এই আইনগুলি বাতিল করা যায় না। আবার সাধারণ আইন পাশের পদ্ধতিতে এই অধিকার গুলিতে বাতিল করা যায় না এগুলি শুধুমাত্র সংবিধান বর্ণিত পদ্ধতিতে পরিবর্তন করা যায়।
কয়টি মৌলিক অধিকার রয়েছে ?
ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে ১২ থেকে ৩৫নম্বর ধারায় নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সমূহ লিপিবদ্ধ আছে । মূল সংবিধানে ৭টি অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে গণ্য করা হলেও ৪৪ তম সংবিধান সংশােধনের পর ১৯৭৮ সাল থেকে সম্পত্তির অধিকার মৌলিক অধিকারের আওতায় পড়ে না।
বর্তমানে যে মৌলিক অধিকারগুলি স্বীকৃত তাহল –
(1) সাম্যের অধিকার
(২) স্বাধীনতার অধিকার
(৩) শােষনের বিরুদ্ধে অধিকার
(৪) ধর্মাচরণের অধিকার।
(৫) শিক্ষা ও সংস্কৃতির অধিকার।
(৬) শাসনতান্ত্রিক প্রতিবিধানের অধিকার।
মৌলিক অধিকার গুলো কী কী?
ভারতে স্বীকৃত ৬টি মৌলিক অধিকার সম্পর্কে ইচ্ছে বিশদে আলোচনা করা রইলো।
সাম্যের অধিকার (১৪-১৮ নং ধারা):
কোন নাগরিককে জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, ভাষা এবং রাজ্যের ভিত্তিতে কোন ভেদাভেদ করা চলবে না।
স্বাধীনতার অধিকার (১৯-২২ নং ধারা):
- এই অধিকারে সবাইকে স্বাধীনভাবে কথা বলার,ভাষণ দেবার, নিজেদের মত বিনিময়ের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।
- সকল নাগরিক দেশের যেকোনো অংশে স্বাধীন ভাবে আসা যাওয়া করতে পারবে।
- দেশের যে কোন অংশে বসবাস করার স্বাধীনতা থাকবে।
- স্বাধীনভাবে পয়সা রােজগার এবং খরচ করার অধিকার থাকবে।
শােষণের বিরুদ্ধে অধিকার (২৩-২৪ নং ধারা):
- চৌদ্দ বৎসরের কম বয়সী কোন বাচ্চাকে কোন কারখানায়, খনি বা কোন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে লাগানাে যাবে না।
- কোন মানুষকে কেনাবেচা অর্থাৎ ক্রীতদাসে পরিণত করা যাবে না।
- কোন ব্যক্তিকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন কাজ করানো যাবে না।
- বিনা পারিশ্রমিকে কাউকে বেগার খাটানাে যাবেনা।
- শােষণকে ঘাের অপরাধ মান্য করা হয়।
ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার (২৫-২৮ নং ধারা):
- প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন ধর্ম মানা বা পালন করার স্বাধীনতা আছে।
- কোন ব্যক্তি অন্য ব্যক্তিকে কোন বিশেষ ধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য না করা।
সংস্কৃতি ও শিক্ষাগত অধিকার (২৯-৩০ নং ধারা):
- ভারতবাসী হিসাবে প্রত্যেককে তাদের নিজ নিজ ভাষায় শিক্ষা লাভের অর্থাৎ পড়া এবং লেখার সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে।
সাংবিধানিক প্রতিবিধানের অধিকার (৩২ নং ধারা):
- এই অধিকারে বলা হয়েছে, সরকার অথবা কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির অধিকার ছিনিয়ে নিতে পারবে না। যদি এমন কিছু ঘটে তাহলে আইনের দ্বারস্থ হতে পারেন। কোর্ট উক্ত ব্যক্তির মৌলিক অধিকার রক্ষা করবে।
- আইন ভঙ্গ না করা পর্যন্ত কোন নাগরিক নিজেকে দোষী বলে সাব্যস্ত হবেন না।
- কোন ব্যক্তি কোন অপরাধ সংঘটিত করলে তার বিরুদ্ধে একের বেশি মােকদ্দমা চালানাে যাবে না।
প্রসঙ্গত, মূল ভারতীয় সংবিধানে সাত প্রকারের মৌলিক অধিকারের উল্লেখ থাকলেও ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে ৪৪তম সংশোধনীর দ্বারা সম্পত্তির অধিকারকে মৌলিক অধিকার থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে ।
এরকম আরও কিছু পোস্ট :
ভারতীয় সংবিধানের বিভিন্ন অংশ – ধারা ও তাদের বিষয়বস্তু । Parts of Indian Constitution