Bengal Volunteers – বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স দল

বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স দল : বিংশ শতকের সূচনায় ঢাকার বিপ্লবী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠন ছিল বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স। ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে হেমচন্দ্র ঘোষ ঢাকায় এই বিপ্লবী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুর দিকে এই প্রতিষ্ঠানের কোন নাম ছিল না। পরবর্তীকালে সরকারি রিপোর্টে এই বিপ্লবী সংগঠন কে বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স নামে অভিহিত করা হয়।

বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স সংগঠন

১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে কংগ্রেস সভাপতি মতিলাল নেহেরুকে সামরিক কায়দায় অভিবাদন জানানোর উদ্দেশ্যে এবং পুলিশি নিপীড়নের প্রতিবাদ স্বরূপ দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের অনুপ্রেরণায় সুভাষচন্দ্র বসু বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী গড়ে তোলেন।

দেখে নাও : ভারতের বিপ্লবী সমিতি ও প্রতিষ্ঠাতা

বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স নেতৃবৃন্দ

বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স দলের প্রধান পরিচালক সুভাষচন্দ্র বসু হলেও এই দলের প্রকৃত নেতৃত্ব দেন মেজর সত্য গুপ্ত। এছাড়া হরিদাস দত্ত, সুপতি রায়, জ্যোতিষ জোয়ারদার প্রমুখও ছিলেন এই সংগঠনের উল্লেখযোগ্য নেতৃত্ব।

দেখে নাও : বিভিন্ন ঐতিহাসিক পত্রিকার সম্পাদকের নাম

বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স দলের সক্রিয় সদস্য

বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলের অধিকাংশ সদস্য ছিল ছাত্র এবং তাদের স্বদেশ প্রেম ছিল অত্যন্ত গভীর। রাইটার্স বিল্ডিং আক্রমণকারী বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত ও দীনেশ গুপ্ত, ডগলাস হত্যাকারী প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্য, বার্জ হত্যাকারী অনাথ পাঁজা, মৃগেন দত্ত, ব্রজ কিশোর চক্রবর্তী, রামকৃষ্ণ রায়, গণেশ ঘোষ প্রমুখ ছিলেন এই দলের সক্রিয় সদস্য।

বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স দলের উদ্দেশ্যে

বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলের প্রধান উদ্দেশ্য গুলি ছিল –

  • ১) ভারতের স্বাধীনতার লক্ষ্যে সদস্যদের যে কোন আত্মত্যাগের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করা।
  • ২) বিপ্লবীদের অস্ত্র প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
  • ৩) কুখ্যাত ব্রিটিশ পুলিশ অফিসার ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের হত্যার পরিকল্পনা করা ও তা বাস্তবায়িত করা।

অলিন্দ যুদ্ধ

বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য বৈপ্লবিক কার্যকলাপ হলো রাইটার্স বিল্ডিং অভিযান বা অলিন্দ যুদ্ধ। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ৮ই ডিসেম্বর বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলের সক্রিয় সদস্য বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত ও দীনেশ গুপ্ত ইউরোপীয় পোশাকে সজ্জিত হয়ে ব্রিটিশ শাসনের মূল কেন্দ্র রাইডাস বিল্ডিং এ প্রবেশ করেন এবং কারা বিভাগের অত্যাচারি অধিকর্তা ইন্সপেক্টর জেনারেল সিম্পসন ও আরো একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারী ক্রেগকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর ব্রিটিশ পুলিশ রাইডার্স বিল্ডিং ঘিরে ফেললে রাইটার্স বিল্ডিং এর অলিন্দে পুলিশের সঙ্গে ওই তিন বিপ্লবীর এক অসম লড়াই শুরু হয়। এই ঘটনা ইতিহাসে অলিন্দ যুদ্ধ নামে পরিচিত। দীর্ঘক্ষণ অসম লড়াই চলার পর পালানো অসম্ভব বুঝে তিনজন বিপ্লবীই আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। ঘটনাস্থলে বাদলের মৃত্যু হয় এবং বিনয় ও দীনেশকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কয়েকদিন পর হাসপাতালে বিনয়ের মৃত্যু হয়। দীনেশ সুস্থ হলে ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে ৭ই জুলাই তাঁকে ফাঁসি দেওয়া হয়।

মূল্যায়ন

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স দলের অবদান ছিল অপরিসীম। তাদের বিভিন্ন দুঃসাহসিক কার্যকলাপ, আত্মত্যাগ ও আত্ম বলিদান বাংলার বিপ্লবীদের স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদানের প্রেরণা জোগায় এবং বাঙালি যুবসমাজকে এক নতুন পথের দিশা দেখায়।

Scroll to Top